নিজেস্ব প্রতিবেদক:-মাধবদীর বিভিন্ন স্বনামধন্য মিষ্টির দোকানে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরির পাশাপাশি চমকপ্রদ মিষ্টির প্যাকেটে ওজন কারসাজির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত করে আসছে নরসিংদীর মাধবদী পৌর এলাকার সাধারণ ক্রেতাদের। আর এতে করে নির্ধারিত মুনাফার পর ও অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে ওজন কারসাজির সাথে জড়িত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
গ্রাহকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেলে মাধবদী বাজারের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান ঘুরে গ্রাহকদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী মুছা মিয়া বলেন, গত তিনদিন পূর্বে আমি মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এর পিপাসা সুইটমিট থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে এক কেজি মিষ্টি কিনি। তারা আমাকে যে প্যাকেটে মিষ্টি দিয়েছে সেই খালি প্যাকেটের ওজন ৩৬০ গ্রাম। এক কেজি মিষ্টিতে যদি ৩৬০ গ্রাম গচ্ছা দিতে হয় তাহলে প্রতিদিন তারা অন্তত ১থেকে দেড়শত গ্রাহককে এভাবেই প্রতাড়িত করে আসছে।
এব্যাপারে স্থানীয় গণমাধ্যম ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মাধবদী বটতলার ঐতিহ্যবাহী শিমুল সুইটমিটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি তৈরির কাজ চলছে। তাছাড়া অধিকাংশ মিষ্টির সসপেন ও দইয়ের হাড়িতে তেলাপোকা অবাধে বিচরণ করার পাশাপাশি অনেক তেলাপোকা মরে মিষ্টির সিরার উপর ভেসে রয়েছে।
যেসমস্ত দোকানে ওজনে মিষ্টি বিক্রি হয় তার অধিকাংশ দোকানে ৩ ধরনের মিষ্টির প্যাকেট রয়েছে। দোকানের সামনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম সম্বলিত ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের কিছু প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভেতরে তাকের মধ্যে ১৪০ থেকে১৯০ গ্রাম ওজনের কিছু প্যাকেট সাজানো রয়েছে। আর মিষ্টি বিক্রির জন্য যেগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সেগুলোর ওজন ২২০ থেকে ৩৩০ গ্রাম ওজনের। অর্থাৎ এসকল প্যাকেটে মিষ্টি কিনে একজন ক্রেতা প্রতি কেজি মিষ্টিতে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজন কারসাজির স্বীকার হচ্ছেন।
প্যাকেটের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যাবসায়ীরা জানান, মাধবদীতে মিষ্টির নির্ধারিত কোন মূল্য নেই। একেক দোকানদার একেক রকম দামে মিষ্টি বিক্রি করে। এতে করে দোকানদাররা গ্রাহকদের কাছে মিষ্টি বিক্রির সময় সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া গ্রাহকরা যখন কম দামে মিষ্টি নিতে চায় তখন বেশি ওজনের প্যাকেটে তাদের মিষ্টি দেওয়া হয় এতে করে দাম কম হলেও প্যাকেটের ওজনের কারণে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যায়।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাঝারি ওজনের প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রি করা হয়। আর নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ৬০ গ্রাম বা ১০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটগুলো শুধুমাত্র আইনি জটিলতা থেকে বাঁচার জন্য সাজিয়ে রাখা হয় বলে ও জানান তারা।
মাধবদী বাজারের দীপা সুইটমিট, হোটেল পট্রির
, পিপাসা সুইটমিট-মাধবদী বাসস্ট্যান্ড মুসলিম সুইটমিটস, জল খাবার সুইটমিট, শিমুল সুইটমিট ত্রী নাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার সহ বেশ কিছু দোকানদার দীর্ঘদিন ধরে ক্রেতাদের সাথে এমন অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে আসছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
পিপাসা সুইটমিট-২ মাধবদী বাজান শাখার মালিকের দোকানে গিয়ে অতিরিক্ত ওজনের প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রি করতে দেখে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি তার ভুল স্বীকার করে বলেন, আজ ভুলবশত মিষ্টির প্যাকেট মনে করে দইয়ের প্যাকেটে মিষ্টি দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবে না বলে ও জানান তিনি
দীপা সুইটমিটের ম্যানেজার বলেন, কাস্টমারের কাছে ৮০ গ্রাম কার্টুনে মিষ্টি নিলে ২৫০ টাকা কেজি ও ২২০ গ্রাম ওজনের কার্টুনে মিষ্টি নিলে ২২০ টাকা কেজি বলেই বিক্রি করি। দোকানদারের কাছে ৮০ গ্রাম ওজনের কার্টুন দেখতে চাইলে তিনি তার দোকানে নেই বলে জানান। তারপর দোকানদার আর কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে পিপাসা সুইটমিট-১ এর মালিক বলেন, সুইটমিট সমিতির পক্ষ থেকে ৫০ গ্রাম ওজনের কার্টুন দিয়ে মিষ্টি বিক্রি করতে বলা হলেও কিছু কিছু দোকানদার বেশি ওজনের কার্টুন দিয়ে মিষ্টি বিক্রি করায় আমিও করি। আজ থেকে আমি আর বেশি ওজনের কার্টুন দিয়ে মিষ্টি বিক্রি করব না। মিষ্টির দোকান গুলি পরিদর্শন করে দেখা সব চেয়ে বেশী অস্বাস্হ্যকর ও নোংরা পরিবেশ মিষ্টি তৈরী হয় জল খাবর ও শিমুল সুইটমিটে।
অনেক দোকান মালিকরাই বলেছেন মাধবদী বাজার বণিক সমিতির পক্ষ থেকে সকল দোকানদারদের জন্য মিষ্টির একটি নির্দিষ্ট মূল্য ঠিক করে দিলে ক্রেতাদের এ ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে না বলে ও জানান তিনি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মাধবদী পৌরসভার সেনিটারি ইন্সপেক্টর এর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মাধবদী বাজার সুইটমিট সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, ডিসি মহোদয়ের নির্দেশে বাজারের মিষ্টি বিক্রেতাদের সাথে আলোচনা করে প্যাকেটের ওজন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সে সিদ্ধান্ত অমান্য করে নিজেদের ইচ্ছামত প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রি করে গ্রাহক ঠকিয়ে আসছে।
মাধবদী বাজার সুইটমিট সমিতির সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার সাহা বলেন, দোকানদারদের সঠিক ওজনের প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রির জন্য একাধিকবার তাগাদা দিলেও তারা তা মানেন নি। এ ব্যাপারে ৬০থেকে ৮০ গ্রামের ওজনের প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রির সিদ্ধান্ত ও দেওয়া হয়েছে কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে বেশি ওজনের প্যাকেট দিয়েই তারা মিষ্টি বিক্রি করছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply