পবিএ ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো পশু কোরবানি করা। এদিন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে পশুর রক্ত ও উচ্ছিষ্টাংশ থেকে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা রয়ে যায়। আর বর্জ্য থেকে বিভিন্ন রোগবালাই ছড়ানোর আশঙ্কা তো থাকেই। এজন্য পশু কোরবানির পর সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে আমাদের সবারই নজর দিতে হবে। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কোরবানির পশুর বর্জ্য যথাযথভাবে পরিষ্কার করা না হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবেই নানারকম মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
পশু কোরবানির পর সৃষ্ট বর্জ্য পরিষ্কার করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। সুষ্ঠুভাবে কোরবানি না দেওয়ায় প্রতিবছরই পরিবেশে দূষণ ঘটে, যা ধর্মীয় এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রহণযোগ্য। যত্রতত্র কোরবানি দেওয়া; চামড়া, রক্ত, ব্যবহৃত চাটাই ইত্যাদি যাবতীয় আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলে দেওয়ার ফলে খুব দ্রুত জীবাণু সংক্রমণসহ দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এতে বায়ু, পানি ও মাটি এই তিনটি প্রাকৃতিক উপাদানই দূষিত হয়, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে।
সারা দেশে বছরে যে পরিমাণ পশু জবাই করা হয়, তার প্রায় ৬০ ভাগ কোরবানির ঈদে জবাই হয়। জবাইকৃত পশুর বর্জ্য-রক্ত, নাড়িভূড়ি, গোবর, হাড়, খুর, শিং সঠিক ব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনার অভাবে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। পরিবেশসম্মত কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করা হলে একদিকে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা, অন্যদিকে জবাইকৃত পশুর ঊচ্ছিষ্ঠাংশগুলো সম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে।
কোরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলার কারনে তা পচে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষিত করে। শুধু তাই নয়, নালা বা নর্দমায় ফেলা বর্জ্য থেকে ছড়ায় নানা ধরনের রোগের জীবাণু। অতিরিক্ত বর্জ্যরে চাপে নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার পানি আটকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তখন সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এসব বর্জ্য অপসারণ করতেও হিমশিম খায়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার সংবাদপত্র, টেলিভিশনসহ প্রায় সব গণমাধ্যমেই কমবেশি প্রচারণা চালানো হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা সেসব বিষয় ততটা আমলে নিই না। এতে আমরাই সম্মুখীন হই নানা সমস্যার। তবে যদি কোরবানির বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা যায়, তাহলে পরিবেশ থাকবে দূষণমুক্ত, জনস্বাস্থ্যও থাকবে নিরাপদ।
বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার একটি উপায় হলো গ্রামাঞ্চলে অনেকের পশু একত্রে কোরবানি করা এবং পশুর বর্জ্য মাটির নিচে পুতে রাখা, যা পরবর্তী বছর কোরবানির আগেই জৈবসার হিসেবে শস্যক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে যায়। কোরবানির সব কার্যক্রম শেষে রক্তমাখা রাস্তাঘাট ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
জীবাণু যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য নোংরা জায়গা পরিষ্কারের সময় ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুফল এবং অব্যবস্থাপনার কুফল সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।
তবে যেসব এলাকায় গর্ত খোঁড়ার উপযুক্ত জায়গা নেই, সেসব এলাকার বর্জ্য প্রচলিত উপায়ে অপসারণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার দায়িত্বভার কিছুটা হলেও কমবে। পাশাপাশি বর্জ্যগুলো নষ্ট না হয়ে কাজেও লাগবে।
কোরবানির পর আমাদের সচেতনতাই পারে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ স্বাস্থ্যকর হিসাবে বজায় রাখতে।
মাহবুব সৈয়দ
গণমাধ্যম ও পরিবেশ কর্মী
Leave a Reply