নরসিংদী-২ আসনের রাজনীতি একসময় একাই ধরে রেখেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মঈন খান। ১৯৯১ সাল থেকে টানা চারবার এমপি হয়েছিলেন এই নেতা। পলাশ উপজেলায় ব্যাপক নামডাক ছিল মঈন খানের। জাতীয়ভাবেও আলোচনায় থাকতেন তিনি। তবে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা: দিলীপের কাছে হারের পর থেকে এখনো আসনটি হাতছাড়া বিএনপির। পরে পলাশের রাজনীতিতে যুক্ত হয় আরেকটি নাম,ডা:দিলীপের ভাই দেশখ্যাত ব্যবসায়ী পোটন খান এই এলাকায় রাজনীতি মানেই এখন দুই ভাইয়ের বলয়। এর বাইরে কোনো বলয় নেই বললেই চলে।
পলাশ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং নরসিংদী সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন (আমাদিয়া, পাঁচদোনা ও মেহেরপাড়া) নিয়ে গঠিত নরসিংদী-২। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের নৌকা প্রতীকে বিজয়ের মধ্য দিয়ে আসনটি হাতছাড়া হয় বিএনপির। দশমে দিলীপ দলীয় মনোনয়ন পাননি। তবে মহাজোটের প্রার্থী জায়েদুল কবীরকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হন দেশখ্যাত ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খান পোটন। একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি হন দিলীপ। নরসিংদী-২ রাজনৈতিকভাবে জেলার গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে পরিচিত।
সরেজমিনে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই আসনের আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই ভাই দিলীপ ও পোটনকে ঘিরেই। এর বাইরে আওয়ামী লীগের কোনো বলয় নেই, প্রকাশ্যে নেই কোনো কোন্দলও। দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে শক্ত অবস্থানে এখানকার আওয়ামী লীগের রাজনীতি। আগামী নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘুরেফিরে আসছে এ দুজনের নাম।
দ্বাদশ নির্বাচনে দুই ভাইয়ের মধ্যে যে কেউ মনোনয়ন পেতে পারেন বলে দলীয় নেতা-কর্মীদের ধারণা।
এ ছাড়া দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য আলতামাস কবির মিশু মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ স্পষ্টত নির্বাচনমুখী হলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে অনড় বিএনপি। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণে সরব হলেও বিএনপির সম্ভাব্য একমাত্র প্রার্থী আব্দুল মঈন খান গুরুত্ব দিচ্ছেন দলীয় কর্মসূচিকে। দলীয় কোন্দল না থাকলেও এই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের মামলা, হামলা ও পুলিশি বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মঈন খান নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় না গেলেও এসব বাধার মুখেই রাজনীতির মাঠে গোপনে চলছে বিএনপির ভোটের হিসাব-নিকাশ। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে এখানে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর মধ্যেই হবে ভোটের লড়াই।
প্রধান দুই দল বাদে এখানে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁরা হলেন জেলা জাসদের সভাপতি জায়েদুল কবীর, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এ এন এম রফিকুল আলম সেলিম।
নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাওয়া হলে এমপি দিলীপ আমাদের নরসিংদী কে বলেন, ‘মূল দলসহ অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠিত হয়েছে, আমরা এমন কোনো কাজ করিনি, যাতে মানুষ আমাদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। আমরা আবারও বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। পক্ষান্তরে বিএনপির কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই, জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দোষারোপের রাজনীতি, মুখ খারাপের রাজনীতি তাঁরা করেই আসছেন, ইস্যু তৈরি করার জন্য তাঁরা বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এরফান আলী আমাদের নরসিংদী কে বলেন,তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। অন্য কোনো সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি ভয় পায় জনগণকে। জনগণ যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়, তাহলে তাঁদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।