মাধবদী সংবাদদাতা,

নরসিংদীর মাধবদীতে এলসি জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা নুর ইসলাম হাজির দুই ছেলে মাসুদ ও জুয়েলের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে চীনা এলসি সুবিধা ব্যবহার করে টেক্সটাইল ও টেক্সটাইল মেশিনারি আমদানি করছে। অথচ কারখানায় ব্যবহারের বদলে এই মালামাল খোলা বাজারে বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।

কীভাবে চলছে জালিয়াতি?

মাসুদ ও জুয়েল আমদানি করা টেক্সটাইল ও মেশিনারি নিজেদের কারখানায় ব্যবহার না করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ একাধিক অভিযোগ থাকলেও, আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে তারা কার্যত দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে।

এনবিআর এবং প্রশাসনের নীরবতা

গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে এনবিআর কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে কিংবা টাকার বিনিময়ে তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এনবিআরের অনেক কর্মকর্তা এই জালিয়াতি সম্পর্কে অবগত থাকলেও, তারা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং ছাত্র আন্দোলন দমন

২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় মাসুদ ও জুয়েল ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তারা আন্দোলনকারীদের দমন করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি চেম্বার অফ কমার্সের একটি প্রোগ্রামে ব্যবসায়ীরা সুতা সিন্ডিকেট ও এলসি জালিয়াতির বিষয়টি তোলেন। এতে নরসিংদীর স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, মাসুদ ও জুয়েল তাদের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই জালিয়াতি এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ে ছোট্ট একটি সংবাদ ভাইরাল হলে সাধারণ জনগণ এবং বিভিন্ন মহল নড়েচড়ে বসে। তবে মাসুদ ও জুয়েল সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছে না। ফোন করলেও তারা তা কেটে দিচ্ছে।

রাজস্ব ফাঁকির পরিণতি

জালিয়াতির মাধ্যমে তারা বিশাল সম্পত্তি গড়ে তুলেছে। বর্তমানে তারা বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করছে এবং তাদের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে।

সাধারণ মানুষের আহ্বান

নরসিংদীর সাধারণ ব্যবসায়ী ও নাগরিকরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এবং এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এলসি জালিয়াতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত মাসুদ ও জুয়েলের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষ ও সরকারের রাজস্ব উভয়েরই ক্ষতি হবে।
পর্ব ১ বিস্তারিত চোখ রাখুন __